সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পদার্থ -অ-পদার্থ

পদার্থ -অ-পদার্থ

আমার মা স্কুলে পাঠশালায় যান নি। বিদ্যাসাগর মশাইয়ের প্রথম ভাগ পড়তে পারতেন। দ্বিতীয় ভাগ অনেক কষ্টে বানান করে পড়ার চেষ্টা করতেন। আমি পেছনে লাগতাম। একবার তিনি আমাদের এক দাদাকে একটি পোষ্ট কার্ড লিখে একজনকে পোষ্ট করতে দিয়েছিলেন। ঠিকানা ছিল না। সেটি আমি হস্তগত করে পাঠোদ্ধার করার চেষ্টা করি। লেখা ছিল,’ বাবা কখন (খোকন), কেমন আছ।...... কিছু পরে ,’ সন্ধ্যা -টুকুনের নেই”। কি নেই? 
মা, সন্ধ্যা টুকুনের কি নেই গো?
সন্ধ্যা আমার এখনকার বড় বোন আর টুকুন মেজ।
অনেক গবেষণা করে জানা গিয়েছিল যে মা লিখতে চেয়েছিলেন,’ সন্ধ্যা টুকুনের প্যান্ট’ নেই।“ মায়ের অপিরিসীম বিশ্বাস ছিল খোকনদার উপর। ভাবতেন খোকন ঠিক বুঝে নেবে।
বলা বাহুল্য তখন আমাদের একটা লড়াই চলছে টিঁকে থাকার। শুধু প্যান্ট নয় প্রায় কিছুই নেই। কিন্তু আমাদের ঘর পূর্ণ ছিল। মা ছিল। দশভূজার থেকেও অনেক অনেক বড় কিছু। এই মা আমার প্রথম বন্ধু ছিল না। ঠাকুদ্দা ছিল আমার এক নম্বর বন্ধু। কিন্তু তারপর থেকে কিভাবে মা হয়ে উঠলেন সবকিছু। সেকথা থাক। এই মা ছাড়া সবাই , বিশেষ করে আমার স্কুলের শিক্ষকরা মনে করতেন আমি একটি অপদার্থ। বড্ড প্রশ্ন করি! দুষ্টুমি করি।
একদিন বিজ্ঞানের ক্লাশে মাস্টারমশাই বললেন,’ পদার্থের রূপান্তর আছে; বিনাশ নাই।‘ মাথার মধ্যে কেমন গোলমাল হয়ে গেল। পদার্থের তিনটে রূপ’ বরফ একটা ভাল উদাহরণ। এখন আবার কিসব কোয়ার্ক প্লাজমা এসব নাকি যোগ হয়েছে। বিজ্ঞানীদের করেকম্মে খেতে হবে তো। বোমা ফোমা বানিয়ে রূপান্তরের যাবতীয় ব্যবস্থা করে ফেলেছে। বেশ বেশ।
জগদীশ চন্দ্র আবার নদীর স্রোতের কথাও শুনতে পান। ‘ নদী , তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ? না, মহাদেবের জটা হইতে।‘ আবার ফিরবে কোথায়?
‘আমরা যথা হইতে আসি তথায় ফিরিয়া যাই।‘
বা! কি সুন্দর ভাবে জলচক্র বুঝে গেলাম।
আমাদের এই শরীরটা পঞ্চভূত দিয়ে তৈরি। Hundred Years Of Solitude এর লেখক মারক্যুইজ বললেন,’ এই মাটিতে, নদীর কলতানে, পাখীর গানে, ফুলের সৌরভে -সব জায়গাতেই আমরা আছি। কোথাও যাই না।‘
পদার্থ বিজ্ঞানী বললেন,’ দেখো বাপু, এই বায়ুমন্ডল ছাড়িয়ে যাবার যো নেই। মরে গেলে তো আরো নেই। রকেটে জোর জবরদস্তি যেতে পার খানিক। মরে গেলে পোড়াক বা কবর দিক মাটিতে মিশে যাবে। এখানেই থাকবে। এইটাই তোমার একমাত্র বাড়িঘর।“
বুদ্ধ বিজ্ঞানী ছিলেন না। বললেন,’ এই জীবনটাকে সুন্দর করে গড়ে নাও। পরের জন্ম আছে কিনা কি দরকার ওসব ভাবার?’
মূল কথার খেই হারিয়ে যাচ্ছে। আমার শরীরটাও তাহলে ক্ষিতি, অপ, তেজ , মরুত ও ব্যোম দিয়ে তৈরি। নির্মল ঝিলে আমিও রুপান্তরিত হব পাখির গানে, ফুলের সৌরভে , দখিনা বাতাসের ফিসফিসানিতে !
তাহলে কি করে অ-পদার্থ হলুম স্যার!
আম্মোও কিছু পদার্থ বটে। আর পঞ্চজনের মতন, বটে কিনা!!!!!

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সত্যম বদ প্রিয়ম বদঃ অপ্রিয়ম সত্যম মা বদ

সত্যম বদ প্রিয়ম বদঃ অপ্রিয়ম সত্যম মা বদ ছোটো বয়সে সংস্কৃত ক্লাশে অনুবাদ করেছিলামঃ সত্যম বদ প্রিয়ম বদঃ অপ্রিয়ম সত্যম মা বদ। মনের মধ্যে খটকা এখনো লেগে আছে। সত্য সবসময় 'প্রিয়' হবে এমন কোনো মানে নেই। লোকের মন রাখতে গিয়ে মিথ্যে বা অর্ধ সত্যের চাষ করে যেতে হবে। তারপর আমরা একটা সুস্থ সমাজ চাইব!  মাঝে মাঝেই দেখি আমি হয়তো কোনো বন্ধুর পোষ্টে কিছু মন্তব্য করেছি যা সত্য কিন্তু তার মনঃপূত নয়। কিছুক্ষণ পর দেখি আমার মন্তব্য ডিলিট করে দিয়েছে। আমি হয়তো আর সেখানে কিছু মন্তব্য করব না বা তাকে আনফ্রেন্ড করব না ( তার স্তরে আমি কেন নামবো ?) কিন্ত সত্য কি ডিলিট করা যাবে? একটা তর্ক প্রায় শুনি- আমার সত্য বনা্ম তোমার সত্য। আমার হাসি পায়। সত্যের স্বরূপ তুমি- আমি -স্বাপেক্ষ নয়।

কেমন আছে শহর বর্ধমান ......(সাত)

কেমন আছে শহর বর্ধমান ......(সাত) বাঁকার সাথে পায়ে পায়ে এবার আমরা একটু অন্যপথে ঘুরতে বেরোব শহরটা। আমাদের অভিমানিনী বাঁকার সঙ্গে একটু আন্তরিক চেনাজানা করা দরকার। চলুন শহরের পশ্চিম দিকে একবার ঘুরে আসি। একটা সময় ছিল যখন একমাত্র বাঁকাই এই শহরের পানীয় জলের যোগান দিত। বেলকাশ ও ফেরীঘাটের উত্তর সীমানা দিয়ে বাঁকা বয়ে এসে রথতলা সাইফনের কাছে আরো ডানদিকে বাঁক নিয়ে রথতলাকে দক্ষিণে রেখে শহরে ঢুকেছে। এখানে বাঁকা এখনো ছোটো নদী। রথতলা ঢোকার আগে আর একটু ডানদিকে বাঁকার একটা ধারা বয়ে গেছে। মনে হয় এটা মানুষের কীর্তি । এখানেই জলকল। আরো উত্তরে বীরুটিকরি গ্রাম। এইখানে জল শোধন করে পাম্পের সাহায্যে শহরে পাঠানো হোত পানীয় জল। মূল এলাকার নাম লাকুরডি। এখন এই লাকুরডি ও জলকল-বীরুটিকুরি গ্রামের মাঝ বরাবর দুর্গাপুর হাইওয়ে বা বাইপাস চলে গেছে। আমরা রথতলা ও মোহন্ত স্থলের কাছে বাঁকাকে ছেড়ে লাকুরডির পথ ধরে টিকরহাটে ঢুকবো। লাকুরডি অঞ্চলের পূর্ব সীমানায় একটা আদ্যিকালের পুরোনো গাছ ও তার নীচে একটা মন্দির আছে। ঠিক তার পূর্ব সীমানা দিয়ে একটা ছোটো কাঁদর ঝিরিঝিরি বয়ে চলেছে দক্ষিণে বাঁকার দিকে। গোদার পশিম পারের মাঠের অতিরিক্ত...

কেমন আছে শহর বর্ধমান ?......( আপাতত শেষ পর্ব)

কেমন আছে শহর বর্ধমান ? ......( আপাতত শেষ পর্ব)  কিভাবে লুপ্তোদ্ধার সম্ভব? না, এই এলোমেলোভাবে গড়ে ওঠা শহরের লুপ্তোদ্ধার সম্ভব নয়। প্রথমেই এই কথাটা বলে রাখা ভাল। কিছু মেরামত করা সম্ভব। এখনই যদি সদর্থক উদ্যোগ নেওয়া যায় তাহলে এই শহরের শ্রী ও স্বাস্থ কিছু পরিমাণে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ বিষয়ে নানাজনের সাথে আলোচনা করে আমার কিছু কথা মনে হয়েছে। এখানে সেই কথাগুলি সংক্ষেপে বলতে চাই। অনেকদিন ধরে নানাসূত্র থেকে আমি কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছিলাম। আমার অসাবধানতার কারণে আমার ল্যাপটপটি নিশিকুটুম্ব নিয়ে গেছে। আমার সংগৃহীত যাবতীয় তথ্যও সেইসঙ্গে চলে গেছে। ফলে তথ্যসহ কথা বলা এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। আমি গত দুতিনদিন ধরে বর্ধমান মিউনিসিপ্যালিটী ও বর্ধমান ডেভেলপমেন্ট অথরিটির ওয়েবসাইট খুঁজলাম । দরকারী তথ্য পেলাম না। এই দুই সংস্থা আমাদের এই প্রিয় শহরের উন্নতির জন্য কি কি পরিকল্পনা রচনা করেছেন জানতে পারলে সুবিধা হোত। লক্ষ্য করে দেখবেন আমি আমার প্রতিবেদন ও ব্যাখ্যায় রাজনৈতিক দোষারোপের মধ্যে নিজেকে জড়াই নি। আমি বুঝেছি এই দোষ আমাদের সকলের। ব্যক্তি মানুষের লোভ ও স্বার্থচিন্তা সমানভাবে দায়ী এই শহরের এই বর্তমান অবস্থ...