সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কেমন আছে শহর বর্ধমান ?......( আপাতত শেষ পর্ব)

কেমন আছে শহর বর্ধমান ?......( আপাতত শেষ পর্ব) 

কিভাবে লুপ্তোদ্ধার সম্ভব?
না, এই এলোমেলোভাবে গড়ে ওঠা শহরের লুপ্তোদ্ধার সম্ভব নয়। প্রথমেই এই কথাটা বলে রাখা ভাল। কিছু মেরামত করা সম্ভব। এখনই যদি সদর্থক উদ্যোগ নেওয়া যায় তাহলে এই শহরের শ্রী ও স্বাস্থ কিছু পরিমাণে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ বিষয়ে নানাজনের সাথে আলোচনা করে আমার কিছু কথা মনে হয়েছে। এখানে সেই কথাগুলি সংক্ষেপে বলতে চাই। অনেকদিন ধরে নানাসূত্র থেকে আমি কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছিলাম। আমার অসাবধানতার কারণে আমার ল্যাপটপটি নিশিকুটুম্ব নিয়ে গেছে। আমার সংগৃহীত যাবতীয় তথ্যও সেইসঙ্গে চলে গেছে। ফলে তথ্যসহ কথা বলা এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। আমি গত দুতিনদিন ধরে বর্ধমান মিউনিসিপ্যালিটী ও বর্ধমান ডেভেলপমেন্ট অথরিটির ওয়েবসাইট খুঁজলাম । দরকারী তথ্য পেলাম না। এই দুই সংস্থা আমাদের এই প্রিয় শহরের উন্নতির জন্য কি কি পরিকল্পনা রচনা করেছেন জানতে পারলে সুবিধা হোত। লক্ষ্য করে দেখবেন আমি আমার প্রতিবেদন ও ব্যাখ্যায় রাজনৈতিক দোষারোপের মধ্যে নিজেকে জড়াই নি। আমি বুঝেছি এই দোষ আমাদের সকলের। ব্যক্তি মানুষের লোভ ও স্বার্থচিন্তা সমানভাবে দায়ী এই শহরের এই বর্তমান অবস্থার জন্য। পঞ্চবার্ষিকী রাজনীতি ও ক্ষমতায় টিকে থাকার মোহ আমাদের এমনিই অন্ধতা প্রদান করে যে আমরা সামগ্রিক মঙ্গলের কথা ভাবতে ভুলে যাই । আইন আর এক্রকমের প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। আইনের হৃদয়বেত্তা থাকে না। আইন নিরপেক্ষ। ব্যক্তিগত সম্পত্তি কণামাত্র ছাড়তে রাজী হই না আমরা। ফলে পৌরসভাকে কাজ করতে হয় নানা আইনী জটিলতা সামাল দিয়ে। ভোট আর একটা বালাই। কার পুকুর, কাদের দোকান,কাদের ফাঁকা জমি, কাদের গাছ এসব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায় । একদা যারা হাসপাতালের সামনে থেকে বেআইনি গুমটি ভেঙ্গে দিয়েছিল, হকার উচ্ছেদ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল রাস্তাকে মানুষের চলাচলের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য ক্ষমতার রঙ বদলে যাবার পর তারা সেই অন্যায় কাজগুলিই করতে থাকে। খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত মানুষদের গরিষ্ঠ অংশ এসব বোঝেন। উচ্চবিত্তদের কোনো জমানাতেই অসুবিধা হয় না।
একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। বাঁকার শুকিয়ে যাবার কারণে এখন এই শহরের পানীয় জলের মূল যোগান আসে ডীপ টিউব ওয়েল থেকে। মাটীর নীচে থেকে জল টেনে তোলা হচ্ছে। বাঁকা মুমূর্ষু আর দামোদর প্রায় মৃত নদ। শহরের নর্দমার জলের খানিক অংশ মাটীর নীচেই ফিরে যাচ্ছে । নানা যায়গায় পানীয় জলের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। জলে আর্সেনিক পাওয়া যাওয়াও বিচিত্র নয়। কত বিত্তবান মানুষ নিজেদের বাড়িতে সাব মারসিবল বসিয়ে নিয়েছেন কারো অনুমতি ব্যাতিরেকে সে খবর কে নেবে। আর দুএক বছরের মধ্যেই এ শহরে পানীয় জলের সমস্যা দেখা দেবে। শহরের মাটীর নীচে জল্ভান্ডার অফুরান নয়। কিছু জায়গা বসে যেতে পারে ( পরিভাষায় যাকে বলে cave in করা)। আমি বিশেষজ্ঞ নই। আমার অনুমানের কথা বললাম। এবার আমার প্রস্তাবের কথা বলি।
১। এই শহরের মিউনিসিপ্যালিটীর বয়স ১৮০ বছর হোল। রাজ পরিবারের আমলে যে জলনিকাশি ব্যবস্থা ও ড্রেনেজ সিস্টেম ছিল তা কতখানি বৈজ্ঞানিক ও কার্যকর ছিল আমি বিস্তারিত ভাবে সে কথা বলার চেষ্টা করেছি। পুরোনা দস্তাবেজ খুঁজলে সেই পরিকল্পনার নকশা ও প্রাসঙ্গিক তথ্য নিশ্চয়ই মিউনিসিপ্যালিটীর মহাফেজখানা থেকে পাওয়া যাবে। সেটা খুঁজে বার করা হোক এবং এখনকার ইঞ্জিনীয়র, সারভেয়ার ও অন্যান্য প্রযুক্তিবিদদের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটী করে তাদের বিচার করে দেখতে বলা হোক আজকের প্রয়োজন অনুযায়ী সেই পরিকল্পনা কতখানি কার্যকরী এবং কিভাবে এই ব্যবস্থাকে আধুনিক রূপ দেওয়া যায় । কোথায় কোথায় সামান্য মেরামত করে পুনরুদ্ধার করা যায় সেটাও দেখা দরকার।
২। এই শহরকে যদি বাঁচাতে হয় তাহলে বাঁকা নদী/ নদ-এর পুরো সংস্কার করতেই হবে। প্রথমত মনে রাখতে হবে রেলোয়েজ কর্তারা যাই বলুন বাঁকা কখনোই নালামাত্র নয়। এটি একটি ছোটো চঞ্চলা সতত প্রবাহিনী নদী। গ্রামের নিষ্পাপ কিশোরী মেয়ে শহরে এসেছে বেড়াতে। তার দুচোখে অপার কৌতূহল। তার মনে রূপকথার স্বপ্ন। আমরা তাকে শহরে একলা পেয়ে মলিন করে তুলেছি। এ আমাদের পাপ। সম্মিলিত পাপ। বাঁকাকে উদ্ধার করার জন্য চাই একটি মাস্টার প্লানের। সেচ ও পূর্ত দপ্তরের অংশগ্রহণ ছাড়া এ কাজ সম্ভব নয়। এখনই যে কাজ করা যেতে তা হোল বাঁকাতে যে সব ড্রেন মিশেছে সেখানে ট্রিট্মেন্ট ছাড়া দূষিত জল ও ময়লা যেন না ফেলা হয়। এই কাজটা শহরের মিউনিসিপ্যালিটির ও উন্নয়ন পর্ষদের । পুরো ড্রেজিং ছাড়া বাঁকাকে বাঁচানো যাবে না। পাশাপাশি কিভাবে বাঁকাকে দখলমুক্ত করা যায় সে ভাবনা জেলা প্রশাসনের। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এ কাজ সম্ভব। এরপর পরিবেশ প্রেমীরা বাঁকার অববাহিকা অঞ্চলে হাজার হাজার গাছ লাগাতে পারবেন। অপরূপা সুন্দরী হয়ে সেজে উঠবে আমাদের প্রিয় শহর। বুক ভরে আরাম নিঃশ্বাস নিতে পারবেন । এখন বাঁকার দুইপারে যারা ঘর বেঁধেছেন তাদের ফুস্ফুস বেশিদিন সুস্থ থাকবে না। নানা রোগে ভুগবেন।
৩।আপাতত আর একটিমাত্র পরামর্শ দেবার আছে আমার। লক্ষীপুর মাঠ পেরিয়ে সাবজলাতে চলুন। এটিকে পুরো ড্রেজিং করিয়ে এর জল ধারণ ক্ষমতা ও জল বহন ক্ষমতা বাড়াতে হবে। নতুন আন্ডার গ্রাউন্ড চ্যানেল কাটাতে হবে যাতে ধাক্কা খেয়ে শহরের দুষিত ও অতিরিক্ত জল শহরেই ফিরে এসে শহরকেই না ডুবিয়ে দেয়। জেলা পর্যায়ে উচ্চপর্যায়ের প্রশাসনিক স্তরের সিদ্ধান্ত ছাড়া এত বড় কাজ
করা সম্ভব নয়। খালবিল মাঠের ক্ষেত্রেও একই কথা। এখানে একটা সুবিধা আছে। একটু উদয়োগ নিলেই চ্যানেল কাটিয়ে অতিরিক্ত জল বাঁকাতে ফেলা যায়- কারণ বাঁকা বেশী দূরে নয়।
৪। লক্ষ করে দেখবেন উত্তরপশ্চিমে একশো আট শিব মন্দির, পশ্চিমে রেনেসাঁ উপনগরী ও পূর্ব দিকে শক্তিগড় পর্যন্ত স্যাটেলাইট টাউনশিপ গড়ে উঠেছে। বর্ধমান এখন সত্যই ক্রমবর্ধমান । এর ফলে নানা রকম প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। পঞ্চায়েত এলাকায় এইসব টাউনশিপ তৈরি হয়েছে পরিকল্পনা বিহীন ভাবে। এই সমগ্র অঞ্চলটিকে বৃহত্তর বর্ধমানের মধ্যে নিয়ে এসে বর্ধমানকে করপোরেশানের মর্যাদায় উন্নীত করা।
আপাতত এই কয়েকটি কথা আমার বলার। আরো অনেক কথা বলা বাকি রইলো। এ বিষয়ে উতসাহী মানুষেরা নিজেদের সুচিন্তিত মতামত নিয়ে এগিয়ে আসুন। বিগত দশদিন ধরে আমি এই প্রতিবেদন লিখে পোস্ট করছি। আমার বন্ধুদের মধ্যে দীপঙ্কর ভট্টাচার্য , সুরভী রায় ও সৌরভ মোহান্ত এই প্রতিবেদন গুলি শেয়ার করেছেন। আমি কৃতজ্ঞ তাদের কাছে। এ ছাড়াও কৌশিক দে , কাশীনাথ গুঁই এবং আরো কিছু বন্ধু নিয়মিত পড়ছেন দেখতে পাই। কিন্তু খুব বেশি মানুষ এই প্রতিবেদন পড়ছেন এমন খবর নেই। আমার লেখা এলোমেলো হয়েছে কারণ এই লেখা স্মৃতি নির্ভর। অনেক ভুল থাকা সম্ভব। আমি বলি কি আমার কথায় ভরসা করার দরকার নেই। একদিন দুচাকায় চেপে বেরোন। একটা বেলা সময় দিন ঘন্টা ছয়েক। আমাকে ডেকে নিন। আমি জায়গাগুলোতে নিয়ে যাব । স্বচক্ষে সরেজমিনে দেখে বুঝে নিন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সত্যম বদ প্রিয়ম বদঃ অপ্রিয়ম সত্যম মা বদ

সত্যম বদ প্রিয়ম বদঃ অপ্রিয়ম সত্যম মা বদ ছোটো বয়সে সংস্কৃত ক্লাশে অনুবাদ করেছিলামঃ সত্যম বদ প্রিয়ম বদঃ অপ্রিয়ম সত্যম মা বদ। মনের মধ্যে খটকা এখনো লেগে আছে। সত্য সবসময় 'প্রিয়' হবে এমন কোনো মানে নেই। লোকের মন রাখতে গিয়ে মিথ্যে বা অর্ধ সত্যের চাষ করে যেতে হবে। তারপর আমরা একটা সুস্থ সমাজ চাইব!  মাঝে মাঝেই দেখি আমি হয়তো কোনো বন্ধুর পোষ্টে কিছু মন্তব্য করেছি যা সত্য কিন্তু তার মনঃপূত নয়। কিছুক্ষণ পর দেখি আমার মন্তব্য ডিলিট করে দিয়েছে। আমি হয়তো আর সেখানে কিছু মন্তব্য করব না বা তাকে আনফ্রেন্ড করব না ( তার স্তরে আমি কেন নামবো ?) কিন্ত সত্য কি ডিলিট করা যাবে? একটা তর্ক প্রায় শুনি- আমার সত্য বনা্ম তোমার সত্য। আমার হাসি পায়। সত্যের স্বরূপ তুমি- আমি -স্বাপেক্ষ নয়।

কেমন আছে শহর বর্ধমান ......(সাত)

কেমন আছে শহর বর্ধমান ......(সাত) বাঁকার সাথে পায়ে পায়ে এবার আমরা একটু অন্যপথে ঘুরতে বেরোব শহরটা। আমাদের অভিমানিনী বাঁকার সঙ্গে একটু আন্তরিক চেনাজানা করা দরকার। চলুন শহরের পশ্চিম দিকে একবার ঘুরে আসি। একটা সময় ছিল যখন একমাত্র বাঁকাই এই শহরের পানীয় জলের যোগান দিত। বেলকাশ ও ফেরীঘাটের উত্তর সীমানা দিয়ে বাঁকা বয়ে এসে রথতলা সাইফনের কাছে আরো ডানদিকে বাঁক নিয়ে রথতলাকে দক্ষিণে রেখে শহরে ঢুকেছে। এখানে বাঁকা এখনো ছোটো নদী। রথতলা ঢোকার আগে আর একটু ডানদিকে বাঁকার একটা ধারা বয়ে গেছে। মনে হয় এটা মানুষের কীর্তি । এখানেই জলকল। আরো উত্তরে বীরুটিকরি গ্রাম। এইখানে জল শোধন করে পাম্পের সাহায্যে শহরে পাঠানো হোত পানীয় জল। মূল এলাকার নাম লাকুরডি। এখন এই লাকুরডি ও জলকল-বীরুটিকুরি গ্রামের মাঝ বরাবর দুর্গাপুর হাইওয়ে বা বাইপাস চলে গেছে। আমরা রথতলা ও মোহন্ত স্থলের কাছে বাঁকাকে ছেড়ে লাকুরডির পথ ধরে টিকরহাটে ঢুকবো। লাকুরডি অঞ্চলের পূর্ব সীমানায় একটা আদ্যিকালের পুরোনো গাছ ও তার নীচে একটা মন্দির আছে। ঠিক তার পূর্ব সীমানা দিয়ে একটা ছোটো কাঁদর ঝিরিঝিরি বয়ে চলেছে দক্ষিণে বাঁকার দিকে। গোদার পশিম পারের মাঠের অতিরিক্ত...