কেমন আছে শহর বর্ধমান ......(সাত)
বাঁকার সাথে পায়ে পায়ে
এবার আমরা একটু অন্যপথে ঘুরতে বেরোব শহরটা। আমাদের অভিমানিনী বাঁকার সঙ্গে একটু আন্তরিক চেনাজানা করা দরকার। চলুন শহরের পশ্চিম দিকে একবার ঘুরে আসি। একটা সময় ছিল যখন একমাত্র বাঁকাই এই শহরের পানীয় জলের যোগান দিত। বেলকাশ ও ফেরীঘাটের উত্তর সীমানা দিয়ে বাঁকা বয়ে এসে রথতলা সাইফনের কাছে আরো ডানদিকে বাঁক নিয়ে রথতলাকে দক্ষিণে রেখে শহরে ঢুকেছে। এখানে বাঁকা এখনো ছোটো নদী। রথতলা ঢোকার আগে আর একটু ডানদিকে বাঁকার একটা ধারা বয়ে গেছে। মনে হয় এটা মানুষের কীর্তি । এখানেই জলকল। আরো উত্তরে বীরুটিকরি গ্রাম। এইখানে জল শোধন করে পাম্পের সাহায্যে শহরে পাঠানো হোত পানীয় জল। মূল এলাকার নাম লাকুরডি। এখন এই লাকুরডি ও জলকল-বীরুটিকুরি গ্রামের মাঝ বরাবর দুর্গাপুর হাইওয়ে বা বাইপাস চলে গেছে। আমরা রথতলা ও মোহন্ত স্থলের কাছে বাঁকাকে ছেড়ে লাকুরডির পথ ধরে টিকরহাটে ঢুকবো। লাকুরডি অঞ্চলের পূর্ব সীমানায় একটা আদ্যিকালের পুরোনো গাছ ও তার নীচে একটা মন্দির আছে। ঠিক তার পূর্ব সীমানা দিয়ে একটা ছোটো কাঁদর ঝিরিঝিরি বয়ে চলেছে দক্ষিণে বাঁকার দিকে। গোদার পশিম পারের মাঠের অতিরিক্ত জল এই কাঁদর বেয়ে এখনো রথতলার কাছে বাঁকায় মেশে। বাঁকায় যখন বান ডাকতো তখন আবার এই পথেই অতিরিক্ত জল গোদার পশ্চিম মাঠ বেয়ে উত্তরের জলায় গিয়ে মিশত । তারপর সেই জল বাবুর বাগের খালে গিয়ে মিশত। এই ভূগোলটা এই শহরের কতজন খোঁজ রাখেন আমি জানি না। এখন নানা কারনে এই সব স্বাভাবিক জলনিকাশি ব্যবস্থার সাড়ে সাতকাহন হয়ে গেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমি শহরটা ঘুরে ঘুরে এই শহরটা কেমন ছিল জানার ও বোঝার চেস্টা করেছি অনেকদিন ধরে। লিখেছি, চেঁচিয়েছি –কিন্তু কেউ গরজ দেখান নি। শহরটাকে ভাল না বাসলে না হয়।
এবার আমি সরাসরি চলে যাব শিশুনিকেতনের মাঠে। এখানে একটা সুন্দর মাঠ ও বাগান এবং সুইমিং পুল নির্মিত হয়েছে। কিন্তু এখানেও বাঁকার ক্যাচমেন্ট এলাকা বা অববাহিকা অঞ্চল খানিকটা দখল করা হয়েছে। রেলগেট পর্যন্ত একই ইতিহাস। অনেক জায়গায় বাঁকার বুকে পিলার তৈরি করে পাকা বাড়ি তইরী হয়েছে। চরে বাড়ি উঠেছে। কার জমি কে দখল করছে সে হিসাব আর কোনদিন মিলবে না। ফলে বাঁকার প্রবাহ-খাত সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। চারদিন বেশি বৃষ্টি হলে কি সর্বনাশ হতে পারে কেউ ভাবছেন না। শহরের যাবতীয় আবর্জনা ও নোংরা জল বাঁকার বুকে ফেলছি আমরা। ফিল্টারিং-এর কোনো ব্যবস্থা না করেই। এ দায়ীত্ব মিউনিসিপ্যালিটির। কে কাকে দোষারোপ করবেন? আমরা সকলেই দায়ী।
চলুন এবার তেলমারুই রোড ধরে গুয়ে বাঁকার কাছে যাই । এই নালা ধাঙড় পাড়ার পূর্ব সীমানা ধরে সোজা উত্তরে বিচিত্রা সিনেমার পশ্চিম গা ঘেঁসে বিসি রোডের নীচে দিয়ে দুভাগে ভাগ হয়ে উত্তর মুখে চলে গেছে। একটি ড্রেনের মুখ কংক্রীটে ঢেকে বিগবাজার পর্যন্ত রাস্তা বানানো হয়েছে( হাততালি দিন সকলে)। বিগবাজার কে ডানহাতে রেখে এই ড্রেনটি জেলখানার পাশ দিয়ে পশ্চিমে বাঁক নিয়ে রসিকপুর খালে গিয়ে মিশেছে। এই খাল অনেক চওড়া ছিল এক সময়। খানিকটা ধাপার খালের দূর সম্পর্কের মাসতুতো ভাইএর মত। ওদিকে রাজ কলেজের উত্তর দিক থেকে আসা আর একটি নর্দমা –খাল সুভাষ পল্লীর বুক চিরে রসিকপুরের খালের সঙ্গে মিশেছে। এরপর এই মিলিত স্রোত সোজা উত্তরে চলে গিয়ে কলেজ মোড়ে জিটি রোডের তলা দিয়ে লক্ষীপুর মাঠে ঢুকে সোজা রেললাইনের তলা দিয়ে সাব-জলা খালে ও জলাভুমিতে মিশেছে। এই সাব-জলার জল ঠেলা দিয়ে পুব দিকে নাবাল জমির উপর দিয়ে বয়ে গিয়ে কাটোয়া রেললাইনের তলা দিয়ে বাজে প্রতাপ্পুরের শেষ সীমানায় কাটোয়া রোডের নীচে দিয়ে একটা ছোট নদীর রূপ ধারণ করে বাজেপ্রতাপ্পুরের পিছন দিয়ে সারকিট হাউস ও টেকনিক্যাল কলেজের পিছন দিয়ে রায়ান গ্রামের ঢোকার মুখ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণ্মুখে বাঁকাকে খুঁজতে ছূট দিয়েছে। এই ছিল এই শহরের পুরোনো জলনিকাশি ব্যবস্থা ও ড্রেনেজ সিস্টেমের আংশিক রূপরেখা । এখন এই সমস্ত অঞ্চলে জমি উঁচু করে শহর গড়ে উঠেছে। সাবজলা আর জল ধারণ করতে পারে না। জল ধাক্কা খেয়ে শহরেই ফিরে আসে এবং সুভাস্পল্লী, রসিকপুর, বাবুরবাগ, ইন্দ্রপ্রস্থ, নজ্রুলপল্লী, রাজকলেজ, খোসবাগানের নীচু অঞ্চল। নারকেল বাগান, মহাজন্টুলি সব ভাসিয়ে দিয়ে ভেনিসে পরিণত করে দেয় এক ঘন্টার বৃষ্টিতেই ।ওদিকে খালবিল মাঠ একটা নতুন উপনগরীতে রুপান্তরিত করে ফেলা হয়েছে। নীচু জমি ভরাট করে উঁচু করা হয়েছে। জল বেরনোর যাবতীয় স্বাভাবিক পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে আধ ঘন্টার একটানা প্রবল বর্ষণে খলবিল মাঠের উপনগরী( আমার দেওয়া না) এবং বাদামতলা জলবন্দী হয়ে পরে। (চলবে)
এবার আমি সরাসরি চলে যাব শিশুনিকেতনের মাঠে। এখানে একটা সুন্দর মাঠ ও বাগান এবং সুইমিং পুল নির্মিত হয়েছে। কিন্তু এখানেও বাঁকার ক্যাচমেন্ট এলাকা বা অববাহিকা অঞ্চল খানিকটা দখল করা হয়েছে। রেলগেট পর্যন্ত একই ইতিহাস। অনেক জায়গায় বাঁকার বুকে পিলার তৈরি করে পাকা বাড়ি তইরী হয়েছে। চরে বাড়ি উঠেছে। কার জমি কে দখল করছে সে হিসাব আর কোনদিন মিলবে না। ফলে বাঁকার প্রবাহ-খাত সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। চারদিন বেশি বৃষ্টি হলে কি সর্বনাশ হতে পারে কেউ ভাবছেন না। শহরের যাবতীয় আবর্জনা ও নোংরা জল বাঁকার বুকে ফেলছি আমরা। ফিল্টারিং-এর কোনো ব্যবস্থা না করেই। এ দায়ীত্ব মিউনিসিপ্যালিটির। কে কাকে দোষারোপ করবেন? আমরা সকলেই দায়ী।
চলুন এবার তেলমারুই রোড ধরে গুয়ে বাঁকার কাছে যাই । এই নালা ধাঙড় পাড়ার পূর্ব সীমানা ধরে সোজা উত্তরে বিচিত্রা সিনেমার পশ্চিম গা ঘেঁসে বিসি রোডের নীচে দিয়ে দুভাগে ভাগ হয়ে উত্তর মুখে চলে গেছে। একটি ড্রেনের মুখ কংক্রীটে ঢেকে বিগবাজার পর্যন্ত রাস্তা বানানো হয়েছে( হাততালি দিন সকলে)। বিগবাজার কে ডানহাতে রেখে এই ড্রেনটি জেলখানার পাশ দিয়ে পশ্চিমে বাঁক নিয়ে রসিকপুর খালে গিয়ে মিশেছে। এই খাল অনেক চওড়া ছিল এক সময়। খানিকটা ধাপার খালের দূর সম্পর্কের মাসতুতো ভাইএর মত। ওদিকে রাজ কলেজের উত্তর দিক থেকে আসা আর একটি নর্দমা –খাল সুভাষ পল্লীর বুক চিরে রসিকপুরের খালের সঙ্গে মিশেছে। এরপর এই মিলিত স্রোত সোজা উত্তরে চলে গিয়ে কলেজ মোড়ে জিটি রোডের তলা দিয়ে লক্ষীপুর মাঠে ঢুকে সোজা রেললাইনের তলা দিয়ে সাব-জলা খালে ও জলাভুমিতে মিশেছে। এই সাব-জলার জল ঠেলা দিয়ে পুব দিকে নাবাল জমির উপর দিয়ে বয়ে গিয়ে কাটোয়া রেললাইনের তলা দিয়ে বাজে প্রতাপ্পুরের শেষ সীমানায় কাটোয়া রোডের নীচে দিয়ে একটা ছোট নদীর রূপ ধারণ করে বাজেপ্রতাপ্পুরের পিছন দিয়ে সারকিট হাউস ও টেকনিক্যাল কলেজের পিছন দিয়ে রায়ান গ্রামের ঢোকার মুখ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণ্মুখে বাঁকাকে খুঁজতে ছূট দিয়েছে। এই ছিল এই শহরের পুরোনো জলনিকাশি ব্যবস্থা ও ড্রেনেজ সিস্টেমের আংশিক রূপরেখা । এখন এই সমস্ত অঞ্চলে জমি উঁচু করে শহর গড়ে উঠেছে। সাবজলা আর জল ধারণ করতে পারে না। জল ধাক্কা খেয়ে শহরেই ফিরে আসে এবং সুভাস্পল্লী, রসিকপুর, বাবুরবাগ, ইন্দ্রপ্রস্থ, নজ্রুলপল্লী, রাজকলেজ, খোসবাগানের নীচু অঞ্চল। নারকেল বাগান, মহাজন্টুলি সব ভাসিয়ে দিয়ে ভেনিসে পরিণত করে দেয় এক ঘন্টার বৃষ্টিতেই ।ওদিকে খালবিল মাঠ একটা নতুন উপনগরীতে রুপান্তরিত করে ফেলা হয়েছে। নীচু জমি ভরাট করে উঁচু করা হয়েছে। জল বেরনোর যাবতীয় স্বাভাবিক পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে আধ ঘন্টার একটানা প্রবল বর্ষণে খলবিল মাঠের উপনগরী( আমার দেওয়া না) এবং বাদামতলা জলবন্দী হয়ে পরে। (চলবে)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন