কেমন আছে শহর বর্ধমান ?......( নয় )
এ শহর কি জতুগৃহ হবে?
আমি যখন ‘বর্ধমান সমাচার’ পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলাম তখন থেকেই মাথায় প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে। এই শহরের সারা অবয়ব জুড়ে “সুপার মার্কেট” তৈরি হতে শুরু করেছে উনিশশো নব্বইয়ের দশক থেকেই। সুপার মার্কেট বলতে যে ঝা চকচকে একটা ছবি মানসচক্ষে ভেসে ওঠে এগুলি তার অত্যন্ত ‘দরিদ্র আত্মীয়’ সংস্করণ । ভেতরে ঢুকে এক রাস্তা থেকে আর এক রাস্তায় ঢুকতে গেলে অবশ্যই ধাক্কা খাবেন উল্টোমুখে আসা অন্য কারো সাথে। নেই আরো কতকিছু। সব থেকে বড় কথা এইসব মার্কেটে আগুণ লাগলে দমকল ঢুকতে পারবে না। যদিবা কোন কৌশলে জলের পাইপ নিয়ে যাওয়া যায় জল কোথায়? আশেপাশের পুকুরগুলি ‘পুকুর চুরি’ হয়ে গেছে। এমন কি বাঁকার পাড়েও যদি বসতি এলাকায় আগুণ লাগে কোনদিন জল পাওয়া যাবে না। সারা শহরটা স্থান বিশেষে খান্ডব বন ও জতুগৃহের রূপ নিয়েছে।
#
অনেক কথা বলার চেস্টা করলাম। আরো অনেক বেশি কথা বলা হোল না। স্মৃতি নির্ভর লেখার এই এক মুস্কিল। লেখা প্রকাশিত হবার পর মনে হয়,’ আরে এই খানটায় এই তথ্য বাদ গেছে; এখানটা অন্যভাবে লেখা যেত ।‘ না, এখন ভেবে লাভ নেই। দুয়েকটা কথা ব্যক্তিগত কৈফিয়ত হিসাবে বলার ইচ্ছে।
#
আমি এই শহরে এসেছি মাবাবার হাত ধরে ৬৫ বছর আগে। এই শহরে আমার জন্ম নয়। বর্ধমান জেলা আমার মাতৃভূমি নয়। অর্থাৎ আমি ‘ভূমিপুত্র’ নই। কিন্তু এই শহর ও এই জেলা আমার ধাত্রীভূমি। আমি লালিতপালিত এই শহরেই। আমার শৈশবের খেলাঘর, আমার বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা সব এই শহরে। স্বাভাবিক নিয়মের ব্যতিক্রম না হলে বাঁকার পাড়ে ‘নির্মল ঝিল’ শ্মশান আমার শেষ বিশ্রামের নির্ধারিত ঠিকানা। এই মাটিতেই মিশে যাবার বাসনা পোষণ করি। আমি আমার ধাত্রীমাতাকে আমার মাতৃভূমির মর্যাদাতেই সম্মান করি। এই শহরের একটা নিজস্ব গন্ধ আছে, ইতিহাস ও সংস্কৃতি চেতনা আছে। আমার মানসলোকের ও ভাবনাচিন্তা জগতের অনেকখানি উপাদান আমি এখান থেকেই সংগ্রহ করেছি। এই শহরের ভালমন্দ আমাকে স্পর্শ করে, আন্দোলিত করে। এই লেখার পিছনেও এই প্রণোদনা কাজ করেছে। নানাদিক থেকেই এই লেখা অসম্পূর্ণ । বাঁকা নদীকে একটা বিভাজন রেখা হিসাবে ধরে নিলে বাঁকার দক্ষিণ পাড়ের বসতি নিয়ে আমি কোন আলোচনাই করিনি। কাঞ্চননগর বাদ দিলে মূল শহরটা বাঁকার উত্তর পাড়েই গড়ে উঠেছিল। দামোদর নদকে সীমানা ধরলে উদয় পল্লী থেকে গোপালনগর পর্যন্ত যে বিস্তৃত অঞ্চল আজ ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে তার মধ্যে রথতলা, আঞ্জিরবাগান, তেজগঞ্জ, সদরঘাট , অন্তর্ভুক্ত। রথতলা থেকে একটা সোজা সরল রেখা টানলে তার মধ্যে আলমগঞ্জ, বেড়, আমবাগান, ছোটো , নীল্পুর, বড় নীল্পুর, পুলিশ লাইন, ভদ্রপল্লী, শিয়ালডাঙ্গা ইত্যাদি জনবহুল এলাকা ঢুকে আছে। এই সব অঞ্চলের এই পটপরিবর্তনের কাহিনী ও ইতিহাস একেবারে নবীন। সত্তর আশি বছর আগেও এই সব অঞ্চল শহরের চৌহদ্দির মধ্যে গণ্য হোত না। ইচ্ছে আছে অন্য কোন সময় এই সব অঞ্চল এবং ভাতছালা বসতি নিয়ে লেখার। এখনো কিছু সবুজের অস্তিত্ব এই অঞ্চল্গুলিতে নজরে পড়ে। তবে খুব বেশিদিন এমনটা থাকবে না বলেই আমার আশঙ্কা । ওদিকে জিটি রোডের উত্তর সীমানা বরাবর যেভাবে অতি দ্রুত নগরায়নের জগন্নাথ ছুটে চলেছে তাতে এই শহরকে আর চেনাই যাবে না। এখনই আমি আর চিনতে পারি না। একশ আট মন্দির থেকে শক্তিগড় পর্যন্ত শহর বাড়ছে। বৃহত্তর বর্ধমানকে করপোরেশানের মর্যাদা দিয়ে নতুনভাবে প্রশাসনিক ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস ঘটানো ইতিমধ্যেই অপরিহার্য হয়ে উঠেছে ।
এই আড়ে ও বহরে যেভাবে শহরীকরন বা নগরায়ন ঘটে চলেছে তার জন্য কী কোন মাস্টার প্লান তৈরি হয়েছে? আমার কাছে যে তথ্য ও খবর আছে তাতে এ প্রশ্নের সহজ উত্তর হোল—না নেই। এই মেদ বৃদ্ধি স্বাস্থের লক্ষণ নয়। পরিকল্পনাহীন এই নগরায়ন হাজারটা নতুন সমস্যা সৃষ্টি করতে বাধ্য।
#
অনেক কথা বলার চেস্টা করলাম। আরো অনেক বেশি কথা বলা হোল না। স্মৃতি নির্ভর লেখার এই এক মুস্কিল। লেখা প্রকাশিত হবার পর মনে হয়,’ আরে এই খানটায় এই তথ্য বাদ গেছে; এখানটা অন্যভাবে লেখা যেত ।‘ না, এখন ভেবে লাভ নেই। দুয়েকটা কথা ব্যক্তিগত কৈফিয়ত হিসাবে বলার ইচ্ছে।
#
আমি এই শহরে এসেছি মাবাবার হাত ধরে ৬৫ বছর আগে। এই শহরে আমার জন্ম নয়। বর্ধমান জেলা আমার মাতৃভূমি নয়। অর্থাৎ আমি ‘ভূমিপুত্র’ নই। কিন্তু এই শহর ও এই জেলা আমার ধাত্রীভূমি। আমি লালিতপালিত এই শহরেই। আমার শৈশবের খেলাঘর, আমার বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা সব এই শহরে। স্বাভাবিক নিয়মের ব্যতিক্রম না হলে বাঁকার পাড়ে ‘নির্মল ঝিল’ শ্মশান আমার শেষ বিশ্রামের নির্ধারিত ঠিকানা। এই মাটিতেই মিশে যাবার বাসনা পোষণ করি। আমি আমার ধাত্রীমাতাকে আমার মাতৃভূমির মর্যাদাতেই সম্মান করি। এই শহরের একটা নিজস্ব গন্ধ আছে, ইতিহাস ও সংস্কৃতি চেতনা আছে। আমার মানসলোকের ও ভাবনাচিন্তা জগতের অনেকখানি উপাদান আমি এখান থেকেই সংগ্রহ করেছি। এই শহরের ভালমন্দ আমাকে স্পর্শ করে, আন্দোলিত করে। এই লেখার পিছনেও এই প্রণোদনা কাজ করেছে। নানাদিক থেকেই এই লেখা অসম্পূর্ণ । বাঁকা নদীকে একটা বিভাজন রেখা হিসাবে ধরে নিলে বাঁকার দক্ষিণ পাড়ের বসতি নিয়ে আমি কোন আলোচনাই করিনি। কাঞ্চননগর বাদ দিলে মূল শহরটা বাঁকার উত্তর পাড়েই গড়ে উঠেছিল। দামোদর নদকে সীমানা ধরলে উদয় পল্লী থেকে গোপালনগর পর্যন্ত যে বিস্তৃত অঞ্চল আজ ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে তার মধ্যে রথতলা, আঞ্জিরবাগান, তেজগঞ্জ, সদরঘাট , অন্তর্ভুক্ত। রথতলা থেকে একটা সোজা সরল রেখা টানলে তার মধ্যে আলমগঞ্জ, বেড়, আমবাগান, ছোটো , নীল্পুর, বড় নীল্পুর, পুলিশ লাইন, ভদ্রপল্লী, শিয়ালডাঙ্গা ইত্যাদি জনবহুল এলাকা ঢুকে আছে। এই সব অঞ্চলের এই পটপরিবর্তনের কাহিনী ও ইতিহাস একেবারে নবীন। সত্তর আশি বছর আগেও এই সব অঞ্চল শহরের চৌহদ্দির মধ্যে গণ্য হোত না। ইচ্ছে আছে অন্য কোন সময় এই সব অঞ্চল এবং ভাতছালা বসতি নিয়ে লেখার। এখনো কিছু সবুজের অস্তিত্ব এই অঞ্চল্গুলিতে নজরে পড়ে। তবে খুব বেশিদিন এমনটা থাকবে না বলেই আমার আশঙ্কা । ওদিকে জিটি রোডের উত্তর সীমানা বরাবর যেভাবে অতি দ্রুত নগরায়নের জগন্নাথ ছুটে চলেছে তাতে এই শহরকে আর চেনাই যাবে না। এখনই আমি আর চিনতে পারি না। একশ আট মন্দির থেকে শক্তিগড় পর্যন্ত শহর বাড়ছে। বৃহত্তর বর্ধমানকে করপোরেশানের মর্যাদা দিয়ে নতুনভাবে প্রশাসনিক ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস ঘটানো ইতিমধ্যেই অপরিহার্য হয়ে উঠেছে ।
এই আড়ে ও বহরে যেভাবে শহরীকরন বা নগরায়ন ঘটে চলেছে তার জন্য কী কোন মাস্টার প্লান তৈরি হয়েছে? আমার কাছে যে তথ্য ও খবর আছে তাতে এ প্রশ্নের সহজ উত্তর হোল—না নেই। এই মেদ বৃদ্ধি স্বাস্থের লক্ষণ নয়। পরিকল্পনাহীন এই নগরায়ন হাজারটা নতুন সমস্যা সৃষ্টি করতে বাধ্য।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন