কেমন আছে শহর বর্ধমান?......(চার)
[কেমন ছিল জলনিকাশি ব্যবস্থা সামন্ততান্ত্রিক আমলে?]
প্রথমে সবুজের কথা যে টুকু আরো বলার ছিল বলে নিই। সদরঘাটের পূবদিক বরাবর হাটশিমুল গ্রাম পর্যন্ত হেঁটে চলুন( সাইকেল আরো ভাল)। এখানে এসে গ্রামের মধ্য দিয়ে ক্যানেলের ব্রীজ পেরিয়ে গোপালপুরে ঢুকে পড়ুন। ইরিগেশান বাংলোর ঠিক পাশে জিটি রোডে পৌঁছে যাবেন। এক্টুখানি পূবে হেঁটে গেলেই উল্লাস। এই শহরের বিত্তবানদের তৃতীয় ঠিকানা( দ্বিতীয়টি কলকাতায় বা রাজারহাট/নিউ টাউনে) এবং মধ্যবিত্তের স্বপ্নের বাড়ি। পঞ্চায়েত এলাকা। ধানজমি দখল করে। পিছনে রেললাইন। পশ্চিমে শিয়াল ডাঙ্গার শেষ প্রান্তের শুরুর বিন্দু। খানিকটা পঞ্চায়েত এলাকা, খানিক মিউনিসিপ্যাল এলাকা। চোখ জুড়ানো সবুজে ছাওয়া ছিল। এখন যেদিকে চোখ যায় কংক্রিটের জঙ্গল। সবুজের আভাস মাত্র চোখে পড়ে। এসব বামফ্রন্টের ‘উন্নয়নের রাজনীতির’ ফসল। তৃনমূলী জমানায় সেই ‘উন্নয়নের’ রথ-ই চলছে বিপুল উদ্যম ও গতিতে। উদয়পল্লী কাঞ্চননগর, রথতলা, ইদিলপুর, তেজগঞ্জ দামোদর বা ডিভিসি ক্যানেলের গা ঘেঁসে অবস্থিত। বর্তমানে জাতীয় সড়ক বা ন্যাশনাল হাইওয়ে একটা বিভাজন রেখা টেনে দিয়েছে। এই অঞ্চলগুলি এই হাইওয়ের দক্ষিণ পাশে আর আঞ্জির বাগান, আলমগঞ্জ, বেড়, বড় নীলপুর রাস্তার উত্তর পাশে। সবুজে সবুজ ছিল। এখন যেদিকে চোখ যায় বাড়ি আর বাড়ি। ৯ বাই ৫ মাইল বর্গ করলে যা দাঁড়ায় তা হোল ৪৫ বর্গ মাইল এলাকা। পঞ্চাশ বছরে লোক বসতি বেড়েছে ৪ গুণ। গাছ, পুকুর ও মানুষের মধ্যে অসম লড়াইতে মানুষই বরাবর জিতে এসেছে। আশেপাশের ধানের জমি দখল হয়ে গেছে উত্তরে তালিতের রেলস্টেশন পর্যন্ত। সকলের অলক্ষ্যেই এভাবে এক বৃহত্তর বর্ধমান শহর তৈরি হচ্ছে তালিত থেকে পূবে শক্তিগড় পর্যন্ত। এসব পরিকল্পনার মধ্যে বৃক্ষ ভাবনা নেই। অরণ্যই নেই তাই ‘অরণ্যে রোদন’ও নেই।
#
পশ্চিম বর্ধমানে এখনো কিছু সবুজ আছে লোকে বলে। আপাত দৃষ্টিতে সেরকমই মনে হয়। কিন্তু যারা এই অঞ্চলে ৬০/৭০ বছর ধরে বসবাস করছি তারা জানি কি মারাত্মক পরিবর্তন ঘটে গেছে। একটা সময় ছিল আমাদের ছোটবেলায় যখন ঝড়ে আম কুড়োতে যেতাম। পুকুরে অবাধে সাঁতার কাটতাম । সন্ধ্যার শুরুতে শিয়ালের ডাক শুনে গা ছমছম করত। মোহনবাগানের মাঠ থেকে ময়ূরের কেকাধ্বনি ভেসে আসত কানে। এখন লাকুড্ডি জলকল পর্যন্ত ‘শহর’ আলোয় ঝলমল। সেদিনের গোদা টিকরহাট এখন আর চেনাই যায় না। এই শহরের স্থানামের মধ্যে অতীতের ইতিহাস বোবা কান্নার মত মিশে আছে মুখ লুকিয়ে। টিকরহাট কাজিরহাট বেচারহাট বোরহাট, তেজগঞ্জ , আলমগঞ্জ, রাণীগঞ্জ, রাজগঞ্জ। রসিকপুর, নীলপুর, ইদিলপুর। ৯৩ খানা গ্রামগঞ্জ নিয়ে গড়ে উঠেছিল এই শহর। এই বক্তব্য ডিস্ট্রিক্ট গেজেটীয়রের সংকলক প্যাটারসনের। ধীরে ধীরে গত অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এই শহরের কায়াকল্প ঘটে চলেছে। পরিকল্পনা বিহীন, অবিন্যস্ত ভাবে।
#
এই শহর যেহেতু পরিকল্পনা মাফিক গড়ে ওঠে নি তাই মনে হওয়া স্বাভাবিক যে এই শহরের পয়ঃপ্রণালী ও জলনিকাশি ব্যবস্থা বলে কিছু গড়ে ওঠে নি। আমার অভিজ্ঞতা ও সংগৃহীত তথ্য এই বক্তব্যকে সম্পূর্ণ সমর্থন করে না। সে কথা বলার আগে এবং তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপিত করার আগে সামান্য কিছু কথা প্রসঙ্গত বলে নিতে চাই। এই শহরের- বিশেষত বিজয় তোরণ থাকে পশ্চিম বর্ধমানের শেষ বিন্দু উদয়পল্লী পর্যন্ত যে জনপদ বিস্তৃত--- মূল বর্ধমান শহর পল্লবিত হয়েছিল সেই ভূভাগ জুড়েই। এর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মহতাব মঞ্জিল যা বর্ধমান রাজবাড়ি নামে পরিচিত। রাজবাড়িকে কেন্দ্র করেই মূল জনবসতি গড়ে উঠেছিল। জিটি রোডের পূব দিকে যে শহর এখন আমরা দেখতে পাই সেই অংশটা তুলনায় অনেক অর্বাচীন। এই প্রাচীন শহরটার বহিরঙ্গে এবং অন্তরে এখনো সামন্ততান্ত্রিক মেজাজ, চলন ও রাজ নস্টালজিয়া মিশে আছে। একটু মনযোগী পর্যবেক্ষণে এই রূপটা ধরা পড়ে। প্রান্তিক বর্ধমান নিয়ে তেমন কোন চিন্তাভাবনা রাজবাড়ির লোকজনের ছিল বলে মনে হয় না। এই রাজবাড়ি কেন্দ্রিক ‘আদি’ শহরটাকে সুন্দর করে সাজানো ও বসবাসযোগ্য রূপে গড়ে তোলার জন্য যা যা করণীয় সেসব পরিকল্পনা অত্যন্ত চিন্তাভাবনা করেই করা হয়েছিল বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী। এ বিষয়ে বিস্তারিত পরবর্তী পর্বে তুলে ধরার চেস্টা করব। ( চলবে )
#
পশ্চিম বর্ধমানে এখনো কিছু সবুজ আছে লোকে বলে। আপাত দৃষ্টিতে সেরকমই মনে হয়। কিন্তু যারা এই অঞ্চলে ৬০/৭০ বছর ধরে বসবাস করছি তারা জানি কি মারাত্মক পরিবর্তন ঘটে গেছে। একটা সময় ছিল আমাদের ছোটবেলায় যখন ঝড়ে আম কুড়োতে যেতাম। পুকুরে অবাধে সাঁতার কাটতাম । সন্ধ্যার শুরুতে শিয়ালের ডাক শুনে গা ছমছম করত। মোহনবাগানের মাঠ থেকে ময়ূরের কেকাধ্বনি ভেসে আসত কানে। এখন লাকুড্ডি জলকল পর্যন্ত ‘শহর’ আলোয় ঝলমল। সেদিনের গোদা টিকরহাট এখন আর চেনাই যায় না। এই শহরের স্থানামের মধ্যে অতীতের ইতিহাস বোবা কান্নার মত মিশে আছে মুখ লুকিয়ে। টিকরহাট কাজিরহাট বেচারহাট বোরহাট, তেজগঞ্জ , আলমগঞ্জ, রাণীগঞ্জ, রাজগঞ্জ। রসিকপুর, নীলপুর, ইদিলপুর। ৯৩ খানা গ্রামগঞ্জ নিয়ে গড়ে উঠেছিল এই শহর। এই বক্তব্য ডিস্ট্রিক্ট গেজেটীয়রের সংকলক প্যাটারসনের। ধীরে ধীরে গত অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এই শহরের কায়াকল্প ঘটে চলেছে। পরিকল্পনা বিহীন, অবিন্যস্ত ভাবে।
#
এই শহর যেহেতু পরিকল্পনা মাফিক গড়ে ওঠে নি তাই মনে হওয়া স্বাভাবিক যে এই শহরের পয়ঃপ্রণালী ও জলনিকাশি ব্যবস্থা বলে কিছু গড়ে ওঠে নি। আমার অভিজ্ঞতা ও সংগৃহীত তথ্য এই বক্তব্যকে সম্পূর্ণ সমর্থন করে না। সে কথা বলার আগে এবং তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপিত করার আগে সামান্য কিছু কথা প্রসঙ্গত বলে নিতে চাই। এই শহরের- বিশেষত বিজয় তোরণ থাকে পশ্চিম বর্ধমানের শেষ বিন্দু উদয়পল্লী পর্যন্ত যে জনপদ বিস্তৃত--- মূল বর্ধমান শহর পল্লবিত হয়েছিল সেই ভূভাগ জুড়েই। এর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মহতাব মঞ্জিল যা বর্ধমান রাজবাড়ি নামে পরিচিত। রাজবাড়িকে কেন্দ্র করেই মূল জনবসতি গড়ে উঠেছিল। জিটি রোডের পূব দিকে যে শহর এখন আমরা দেখতে পাই সেই অংশটা তুলনায় অনেক অর্বাচীন। এই প্রাচীন শহরটার বহিরঙ্গে এবং অন্তরে এখনো সামন্ততান্ত্রিক মেজাজ, চলন ও রাজ নস্টালজিয়া মিশে আছে। একটু মনযোগী পর্যবেক্ষণে এই রূপটা ধরা পড়ে। প্রান্তিক বর্ধমান নিয়ে তেমন কোন চিন্তাভাবনা রাজবাড়ির লোকজনের ছিল বলে মনে হয় না। এই রাজবাড়ি কেন্দ্রিক ‘আদি’ শহরটাকে সুন্দর করে সাজানো ও বসবাসযোগ্য রূপে গড়ে তোলার জন্য যা যা করণীয় সেসব পরিকল্পনা অত্যন্ত চিন্তাভাবনা করেই করা হয়েছিল বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী। এ বিষয়ে বিস্তারিত পরবর্তী পর্বে তুলে ধরার চেস্টা করব। ( চলবে )
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন