শহর বর্ধমান কেমন আছে?।।(দুই)
নদী পাশ ফিরে শোয়। না, এটা কোন গল্পের বা কবিতার লাইন নয়। নদী বিশেষজ্ঞদের কাছে জিজ্ঞেস করলেই তারা প্রাঞ্জল করে বুঝিয়ে দেবেন। আধুনিক প্রযুক্তির সয়ায়তায় দুরন্ত দামোদরকে আমরা বশে এনেছি। এখন এই নদের শুকনো বুকে কান পেতে শুনলে অনুভব করা যায় বুকের গভীরে কতখানি দুঃখ পুষে রেখেছে সে। বর্ধমান জনপদকে সুরক্ষিত রাখার জন্য উত্তর প্রান্ত বরাবর উঁচু মাটির বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। অন্যদিকে নদীর বুকে কায়েম হয়েছে বালি মাফিয়াদের অবাধ লুটপাট। এর কী বিষময় পরণতি হতে পারে তা আমরা কল্পনাও করতে পারছি না। রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে পাঁচ বছরের হিসাবনিকাশের অঙ্ক কষে। স্থায়ী সমাধানের কথা কেউ ভাবতে রাজী নন। ইতিমধ্যেই দুএকবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল বণ্যার জল বাঁধ ফাটিয়ে শহরে প্রায় ঢুকে পড়ার পথ খুঁজে পেল বুঝি! নদীকে বশ করা অত সহজ নয়। আগামী পঞ্চাশ বছরে কী হবে আমরা কেউ জানি না। লোকমুখে প্রবাদ আছেঃ
নদীর তীরে বাস
ভাবনা বারোমাস।।
দামোদর যেদিন পাশ ফিরে শুতে চাইবে সেদিন এই শহরকে বাঁচানো যাবে না। এমন হতে পারে আমরা সেদিন থাকব না। এই অভিশাপ রেখে যাব পরবর্তী প্রজন্মের জন্য।
বাঁকা নদ, নদী না নালা সে বিতর্ক স্মিনারিস্টরা করুন। আমার আগ্রহ নেই। আমি বাঁকাকে নদের মর্যাদা দিয়ে থাকি। আমার কাছে বাঁকা সেই চঞ্চলা সরলা হাস্যময়ী লাস্যময়ী গ্রাম্য বালিকা যে শহরে এসে তার রূপ ও যৌবন খুইয়েছে। আমরা তাকে মলিন করেছি। গলসী থানার রামগোপালপুরের কিছু দক্ষিণে একটি জলা থেকে বাঁকার উতপত্তি। নদী বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন বাঁকা একসময়ে দামোদরেরই প্রদান খাত ছিল। পরে দামোদর আরো দক্ষিণে সরে যায়( নদী পাশ ফেরে) কিন্তু একটা শীর্ণ খাত রয়ে যায়। এখন সে বর্ষাতি নদ কিন্তু সারাবছর তিরতির করে বাঁকা বয়েই চলে। রামগোপালপুরের উল্টোমুখে উত্তর দিকে মানকরের পশ্চিমদিকে অবস্থিত মাড়ো-র( প্রাচীন নাম মন্ডপ) মাঠের এক জলা থেকে বাঁকার দোসর খড়ির উৎপত্তি। খড়ি ও বাঁকা এই দুই বন্ধু মিলিত হয়েছে কালনার অদূরে সমুদ্রগড়ের কাছে। সেখানে তারা এক বিশাল প্রবাহ সৃষ্টি করেছে এবং তারপর গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়েছে। অতি বর্ষায় খড়ি এখনো ভয়ংকর। হলদির কাছ থেকে প্রায় প্রতি বছর খড়ির বন্যাকে ভয় পান গ্রামবাসীরা। শুনলে সকলেই হয়তো আশ্চর্য হবেন যে একসময় বাঁকার বন্যায় রথতলা শুধু নয়, বর্ধমান শহরের অনেক অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্থ হোত। এখনো সেসব কিছুর স্মৃতিচিহ্ন শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে খুঁজে পাওয়া যায়। দুটো উদাহরণ দেব।
১।রাণীগঞ্জ বাজারের মোড় থেকে রাধানগরের রাস্তায় পা বাড়ান। সোজা চলতে থাকুন রাধানগর ষষ্টি তলার দিকে। অনুভব করবেন আপনি ক্রমেই ঢালুর দিকে নামছেন। ডানদিকের বাড়িগুলির দিকে তাকিয়ে দেখুন রাস্তা থেকে কত উঁচু মেঝে। চলতে থাকুন। ষষ্টি তলার দিকে না গিয়ে ডানদিকের রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকুন- ধাঙ্গর পাড়ার দিকে। দুদিকের বাড়ির ভিত রাস্তা থেকে অন্তত তিঞ্চার ফুট উঁচু। কারণ বাঁকার বন্যায় এই অঞ্চল প্রতি বছর ডুবে যেত এক কোমড়। ভাতছালাতেও বন্যার জল ঢুকত। পুরোনো লোকেদের জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন।
২। চলুন পশ্চিম বর্ধমান। আনন্দ মার্গ স্কুলের পাশ দিয়ে গাঙ্গুলি বাগানের রাস্তায় চলুন। সবকটি বাড়ির ভিত রাস্তা থেকে তিন চার ফুট উঁচুতে। বাঁকার বন্যার হাত থেকে বাঁচার জন্য।
এখন বাঁকার বুকের উপর পিলার বসিয়ে বাড়ি তৈরি হয়ে গেছে। নদী দখল হয়ে গেছে। যেদিন বাঁকা কোন কারণে পাশ ফিরে শোবে সেদিন কি হবে? নদীর মনের কথা কেউ জানে? দুতিন বছর আগে শিশুমেলার মাঠ ডুবতে দেখেছিলেন অনেকে। মনে পড়ে? কারো হুঁশ আছে মনে হয়? আমরা দুব্যি মেলা নিয়ে মেতে আছি।
প্রসঙ্গত একটা তথ্য দিতে চাই। বর্ধমানে সঙ্গম রাইয়ের বংশধররা প্রথমে বসত পেতেছিলেন কাঞ্চন নগরে। সেখান থেকে মহারাজ মহতাব চাঁদের আমলে উত্তর ফটকে রাজবাড়ী নির্মাণ করে উঠে আসার কারণ ফি বছর দামোদর ও বাঁকার বন্যায় রথতলা ও কাঞ্চননগর জলবন্দী হয়ে থাকতো। ( চলবে )
নদীর তীরে বাস
ভাবনা বারোমাস।।
দামোদর যেদিন পাশ ফিরে শুতে চাইবে সেদিন এই শহরকে বাঁচানো যাবে না। এমন হতে পারে আমরা সেদিন থাকব না। এই অভিশাপ রেখে যাব পরবর্তী প্রজন্মের জন্য।
বাঁকা নদ, নদী না নালা সে বিতর্ক স্মিনারিস্টরা করুন। আমার আগ্রহ নেই। আমি বাঁকাকে নদের মর্যাদা দিয়ে থাকি। আমার কাছে বাঁকা সেই চঞ্চলা সরলা হাস্যময়ী লাস্যময়ী গ্রাম্য বালিকা যে শহরে এসে তার রূপ ও যৌবন খুইয়েছে। আমরা তাকে মলিন করেছি। গলসী থানার রামগোপালপুরের কিছু দক্ষিণে একটি জলা থেকে বাঁকার উতপত্তি। নদী বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন বাঁকা একসময়ে দামোদরেরই প্রদান খাত ছিল। পরে দামোদর আরো দক্ষিণে সরে যায়( নদী পাশ ফেরে) কিন্তু একটা শীর্ণ খাত রয়ে যায়। এখন সে বর্ষাতি নদ কিন্তু সারাবছর তিরতির করে বাঁকা বয়েই চলে। রামগোপালপুরের উল্টোমুখে উত্তর দিকে মানকরের পশ্চিমদিকে অবস্থিত মাড়ো-র( প্রাচীন নাম মন্ডপ) মাঠের এক জলা থেকে বাঁকার দোসর খড়ির উৎপত্তি। খড়ি ও বাঁকা এই দুই বন্ধু মিলিত হয়েছে কালনার অদূরে সমুদ্রগড়ের কাছে। সেখানে তারা এক বিশাল প্রবাহ সৃষ্টি করেছে এবং তারপর গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়েছে। অতি বর্ষায় খড়ি এখনো ভয়ংকর। হলদির কাছ থেকে প্রায় প্রতি বছর খড়ির বন্যাকে ভয় পান গ্রামবাসীরা। শুনলে সকলেই হয়তো আশ্চর্য হবেন যে একসময় বাঁকার বন্যায় রথতলা শুধু নয়, বর্ধমান শহরের অনেক অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্থ হোত। এখনো সেসব কিছুর স্মৃতিচিহ্ন শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে খুঁজে পাওয়া যায়। দুটো উদাহরণ দেব।
১।রাণীগঞ্জ বাজারের মোড় থেকে রাধানগরের রাস্তায় পা বাড়ান। সোজা চলতে থাকুন রাধানগর ষষ্টি তলার দিকে। অনুভব করবেন আপনি ক্রমেই ঢালুর দিকে নামছেন। ডানদিকের বাড়িগুলির দিকে তাকিয়ে দেখুন রাস্তা থেকে কত উঁচু মেঝে। চলতে থাকুন। ষষ্টি তলার দিকে না গিয়ে ডানদিকের রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকুন- ধাঙ্গর পাড়ার দিকে। দুদিকের বাড়ির ভিত রাস্তা থেকে অন্তত তিঞ্চার ফুট উঁচু। কারণ বাঁকার বন্যায় এই অঞ্চল প্রতি বছর ডুবে যেত এক কোমড়। ভাতছালাতেও বন্যার জল ঢুকত। পুরোনো লোকেদের জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন।
২। চলুন পশ্চিম বর্ধমান। আনন্দ মার্গ স্কুলের পাশ দিয়ে গাঙ্গুলি বাগানের রাস্তায় চলুন। সবকটি বাড়ির ভিত রাস্তা থেকে তিন চার ফুট উঁচুতে। বাঁকার বন্যার হাত থেকে বাঁচার জন্য।
এখন বাঁকার বুকের উপর পিলার বসিয়ে বাড়ি তৈরি হয়ে গেছে। নদী দখল হয়ে গেছে। যেদিন বাঁকা কোন কারণে পাশ ফিরে শোবে সেদিন কি হবে? নদীর মনের কথা কেউ জানে? দুতিন বছর আগে শিশুমেলার মাঠ ডুবতে দেখেছিলেন অনেকে। মনে পড়ে? কারো হুঁশ আছে মনে হয়? আমরা দুব্যি মেলা নিয়ে মেতে আছি।
প্রসঙ্গত একটা তথ্য দিতে চাই। বর্ধমানে সঙ্গম রাইয়ের বংশধররা প্রথমে বসত পেতেছিলেন কাঞ্চন নগরে। সেখান থেকে মহারাজ মহতাব চাঁদের আমলে উত্তর ফটকে রাজবাড়ী নির্মাণ করে উঠে আসার কারণ ফি বছর দামোদর ও বাঁকার বন্যায় রথতলা ও কাঞ্চননগর জলবন্দী হয়ে থাকতো। ( চলবে )
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন