কেমন আছে বর্ধমান শহর?...(তিন)
কোথায় গেল সেইসব গাছগুলি?
।।৫ জুন আজ।।
আজ যারা আমার বয়সী বা বয়সে আমার অগ্রজ তারা স্বচক্ষে দেখেছেন এই জরাজীর্ণ শহর একসময় কতখানি সবুজ ছিল। শুধুমাত্র উত্তরফটক থেকে গোলাপবাগ পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে, কৃষ্ণ সায়রের চারপাশে, মোহন বাগান, তারাবাগ, বাবুরবাগ থেকে কেশবগঞ্জ চটী পর্যন্ত কয়েক হাজার পুরোনো গাছ ছিল। গোলাপ বাগের ভিতরে অসংখ্য গাছ ছিল। শাল, শিশু, মেহগিনির পাশাপাশি আম, বেল, তেঁতুল , পেয়ারা প্রভৃতি ফলের গাছ ছিল। ছিল বকুল, গাব, অশোক, পলাশ, কদম্ব, চালতা, হিজল জারুল- এবং আরো নানা প্রজাতির গাছ। দেবদারু এরকম একটি গাছ। পেয়ারা গাছের বাগান ছিল রমনার মাঠে। এসব গাছ আপনাআপনি গজায় নি। একটা সুনির্দিষ্ট ভাবনা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী এইসব গাছ লাগানো হয়েছিল। শুলিপুকুরের উত্তর পাড়ে বিশাল আমবাগান ছিল। বড় বাজারের মুখ থেকে বোরহাট, টিকরহাট, এবং রাজবাড়ির সামনে থেকে গোলাপবাগ ও জিটি রোড পর্যন্ত মোরাম বিছানো লালমাটির পথ দিয়ে ঘোড়ার গাড়ি সওয়ারি নিয়ে যেত একশো আট শিব মন্দির দর্শন করাতে। উদয় চাঁদ মহিলা কলেজের পাশে বড় চৌবাচ্চা এই সেদিন পর্যন্ত ছিল ঘোড়াদের জল খাবার জন্য। ভেরীখানায় ছিল আস্তাবল। না, এসব রূপকথার কাহিনী নয়। ৬০ বছর আগেকার বর্ধমানের চালচিত্র। বাস্তব চালচিত্র। রাজবাড়ির ভিতরে এবং সামনে রাস্তার দুধারে বিশাল বিশাল গাছ ছিল। আমরা খেলতাম, বিশ্রাম নিতাম সেইসব মহীরুহের সুশীতল ছায়ায়। শীতকালে মিউনিসিপ্যালিটির গাড়ি এসে রাস্তার ধুলো মারার জন্য জল দিত। গ্যাসের বাতি জ্বলত সন্ধ্যার বর্ধমানে।
গোলাপবাগ। এক সময়ের রাজার সখের চিড়িয়াখানা ও প্রমোদ উদ্যান। খুব যত্ন করে সাজানো। চারদিকে পরীখা দিয়ে ঘেরা একটি দ্বীপ। অজস্র মুল্যবান গাছ দিয়ে সাজানো।শিশু, শাল, মেহগিনি। চারদিকে গাছেদের ছায়াঢাকা লাল মোরামের পথ দিয়ে অলস পদচারনায় মনে হোত বুঝিবা অন্য কোন জগতে এসে পড়েছি। ১৯৬০ থেকে ২০১৭ –মাত্র সাতান্ন বছরেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তা ব্যক্তিদের হাতে পরে গোলাপবাগ তার যাবতীয় রোম্যান্টিকতা হারিয়ে ফেলেছে। মোরামের চিহ্ন মাত্র নেই। মুল্যবান প্রাচীন গাছগুলি উধাও। যাদের বয়স এখন চল্লিশের মধ্যে তাদেরও মনে পড়বে গোলাপবাগের উত্তর পশ্চিম অঞ্চল জুড়ে কমল সায়রের পাড় পর্যন্ত একটি বিশাল বন ছিল। দিনের বেলাতেও এই বনের আলোআধারী আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে হাঁটতে হাঁটতে গা ছমছম করত। কয়েক হাজার গাছের ঘন বন ছিল অঞ্চল জুড়ে। এখন একটাও গাছ নেই। সেখানে সগর্বে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে বিশালকায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এমন নয় যে এই বৃক্ষরাজি ধ্বংস না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারণ সম্ভব ছিল না। সম্প্রতি নার্স কোয়াটারসের সামনে একটি বিশাল জলাভুমি বুজিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের উদ্বোধন করা হয়েছে মহা সমারোহে। সরকারী উদ্যোগেই যখন পরিবেশ ধ্বংসের যজ্ঞ মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হয় তখন প্রতিবাদ কার কাছে করবেন?
এবার আসুন একটু অন্যদিকের খোঁজ খবর নেওয়া যাক। এই শহরের পশিম প্রান্তের শেষ বিন্দু উদয়পল্লী বাজার। তারপর থেকেই বেলকাশ অঞ্চলের শুরু। ওই রাস্তা ধরে সোজা হাঁটতে থাকি সদরঘাট পেরিয়ে শহরের পূর্ব দিকের শেষ বিন্দু পর্যন্ত। কিভাবে সর্বনাশ ঘটেছে সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক। (চলবে)
গোলাপবাগ। এক সময়ের রাজার সখের চিড়িয়াখানা ও প্রমোদ উদ্যান। খুব যত্ন করে সাজানো। চারদিকে পরীখা দিয়ে ঘেরা একটি দ্বীপ। অজস্র মুল্যবান গাছ দিয়ে সাজানো।শিশু, শাল, মেহগিনি। চারদিকে গাছেদের ছায়াঢাকা লাল মোরামের পথ দিয়ে অলস পদচারনায় মনে হোত বুঝিবা অন্য কোন জগতে এসে পড়েছি। ১৯৬০ থেকে ২০১৭ –মাত্র সাতান্ন বছরেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তা ব্যক্তিদের হাতে পরে গোলাপবাগ তার যাবতীয় রোম্যান্টিকতা হারিয়ে ফেলেছে। মোরামের চিহ্ন মাত্র নেই। মুল্যবান প্রাচীন গাছগুলি উধাও। যাদের বয়স এখন চল্লিশের মধ্যে তাদেরও মনে পড়বে গোলাপবাগের উত্তর পশ্চিম অঞ্চল জুড়ে কমল সায়রের পাড় পর্যন্ত একটি বিশাল বন ছিল। দিনের বেলাতেও এই বনের আলোআধারী আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে হাঁটতে হাঁটতে গা ছমছম করত। কয়েক হাজার গাছের ঘন বন ছিল অঞ্চল জুড়ে। এখন একটাও গাছ নেই। সেখানে সগর্বে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে বিশালকায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এমন নয় যে এই বৃক্ষরাজি ধ্বংস না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারণ সম্ভব ছিল না। সম্প্রতি নার্স কোয়াটারসের সামনে একটি বিশাল জলাভুমি বুজিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের উদ্বোধন করা হয়েছে মহা সমারোহে। সরকারী উদ্যোগেই যখন পরিবেশ ধ্বংসের যজ্ঞ মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হয় তখন প্রতিবাদ কার কাছে করবেন?
এবার আসুন একটু অন্যদিকের খোঁজ খবর নেওয়া যাক। এই শহরের পশিম প্রান্তের শেষ বিন্দু উদয়পল্লী বাজার। তারপর থেকেই বেলকাশ অঞ্চলের শুরু। ওই রাস্তা ধরে সোজা হাঁটতে থাকি সদরঘাট পেরিয়ে শহরের পূর্ব দিকের শেষ বিন্দু পর্যন্ত। কিভাবে সর্বনাশ ঘটেছে সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক। (চলবে)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন