পঞ্চাশ বছর আমাদের জীবনের অনেকখানি সময়। সেদিন ঠিক এই সময়ে আমি গোলাপবাগে হিউম্যানিটিজ বিল্ডিংস-এর সামনে অপেক্ষা করছি বন্ধুদের জন্য। আমার দায়িত্ব ছিল জাতীয় পতাকা নিয়ে প্রস্তুত থাকা। পতাকা উত্তোলনের জন্য খুঁটি , দড়ি ইত্যাদির ব্যবস্থা করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আসবেন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার জন্য। এক এক করে বন্ধুরা এসে জড় হতে লাগল। আসলে এই দায়িত্ব ছিল ছাত্র সংসদের। এস এফ আই-এর ইউনিয়ন। তারা আগের বছর এই দিনটি পালন করে নি। ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিল অমিয় সাহা। আমরা এক ক্লাশেই পড়তাম। ব্যক্তিগত বন্ধু। ওর কাছে জানতে চাইলাম ওরা স্বাধীনতা দিবস পালন করবে কি না। অমিয় বলল,' এই স্বাধীনতাকে আমরা প্রকৃত স্বাধীনতা বলে স্বীকার করি না।'' আমি বললাম,' আমরা কাল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে স্বাধীনতা দিবস পালন করছি। ইউনিয়ন যেহেতু করছে না, আমরাই দায়িত্ব নিচ্ছি। এলে খুশি হব।'
পনেরোই আগস্ট কিছুক্ষণ পরে অমিয় তার দল্বল নিয়ে এল এবং আমি যেখানে জাতীয় পতাকা রেডি করে রেখেছিলাম তার দশ হাত দূরে গর্ত খুঁড়তে শুরু করল। আমি বিস্মিত হয়ে ওদের কাছে গিয়ে বললাম,' দুটো পতাকা খুব দৃষ্টিকটু লাগবে আজকের দিনে। এক কাজ করা, অনুষ্ঠানটা তোরাই পরিচালনা কর। সেটাই শোভন হবে।'' অমিয়র বন্ধু মানিক আমারও বন্ধু। সে বলল,' আমরা লাল পতাকা উত্তোলন করব। আজকের দিনটা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী দিবস রূপে পালন করব। এই ঝুটা আজাদি আমরা মানি না।'
#
সেদিন তারপর কি হয়েছিল সে কথা থাক। পরবর্তী পঞ্চাশ বছরে সেদিনের সেই সব বন্ধুদের অনেকের সাথেই নানাভাবে সম্পর্ক থেকেছে। কেউ কেউ এখনো ব্যক্তিগত বন্ধু। পরিভাষায় যাকে বলে on the other side of the hedge এদের অনেককে দেখার সুযোগ হয়েছে। এম এল এ, এম পি, মন্ত্রী এবং নানা দায়িত্বপূর্ণ পদে আসীন পদাধিকারীরূপে এদের অনেককে দেখেছি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে, মুস্টিবদ্ধ হস্ত উত্তোলন করে অভিভাদন জানাতে, গাড়িতে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে ঘুরে বেড়াতে। অমিয়র সঙ্গে দেখা হয়েছে। সেদিনের স্মৃতি নিয়ে আমরা বন্ধুর মত কথা বলেছি। একসঙ্গে সময় কাটিয়েছি নানা সুখদুখের আলোচনায়।
#
শামসুর রহমানের কবিতায় পড়েছি--'জীবন জটিল বড়'/ অরণ্যের মত জায়মান'।
এই স্বাধীনতা আমাদের স্বর্গসুখ এনে দেয় নি। কিন্ত হীনমন্যতা থেকে মুক্তি দিয়েছে। এখনো অনেক দূরের পথ পাড়ি দেওয়া বাকি। প্রতি মুহূর্তের সতর্কতা প্রয়োজন। আমি কি করতে পারি-শুধু লেকচারবাজি ছাড়া- সে ভাবনা এবং ভাবনা অনুযায়ী কাজের দায়ীত্ব নেওয়াও জরুরী। স্বাধীনতা কেউ উপহার দেয় না।
পনেরোই আগস্ট কিছুক্ষণ পরে অমিয় তার দল্বল নিয়ে এল এবং আমি যেখানে জাতীয় পতাকা রেডি করে রেখেছিলাম তার দশ হাত দূরে গর্ত খুঁড়তে শুরু করল। আমি বিস্মিত হয়ে ওদের কাছে গিয়ে বললাম,' দুটো পতাকা খুব দৃষ্টিকটু লাগবে আজকের দিনে। এক কাজ করা, অনুষ্ঠানটা তোরাই পরিচালনা কর। সেটাই শোভন হবে।'' অমিয়র বন্ধু মানিক আমারও বন্ধু। সে বলল,' আমরা লাল পতাকা উত্তোলন করব। আজকের দিনটা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী দিবস রূপে পালন করব। এই ঝুটা আজাদি আমরা মানি না।'
#
সেদিন তারপর কি হয়েছিল সে কথা থাক। পরবর্তী পঞ্চাশ বছরে সেদিনের সেই সব বন্ধুদের অনেকের সাথেই নানাভাবে সম্পর্ক থেকেছে। কেউ কেউ এখনো ব্যক্তিগত বন্ধু। পরিভাষায় যাকে বলে on the other side of the hedge এদের অনেককে দেখার সুযোগ হয়েছে। এম এল এ, এম পি, মন্ত্রী এবং নানা দায়িত্বপূর্ণ পদে আসীন পদাধিকারীরূপে এদের অনেককে দেখেছি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে, মুস্টিবদ্ধ হস্ত উত্তোলন করে অভিভাদন জানাতে, গাড়িতে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে ঘুরে বেড়াতে। অমিয়র সঙ্গে দেখা হয়েছে। সেদিনের স্মৃতি নিয়ে আমরা বন্ধুর মত কথা বলেছি। একসঙ্গে সময় কাটিয়েছি নানা সুখদুখের আলোচনায়।
#
শামসুর রহমানের কবিতায় পড়েছি--'জীবন জটিল বড়'/ অরণ্যের মত জায়মান'।
এই স্বাধীনতা আমাদের স্বর্গসুখ এনে দেয় নি। কিন্ত হীনমন্যতা থেকে মুক্তি দিয়েছে। এখনো অনেক দূরের পথ পাড়ি দেওয়া বাকি। প্রতি মুহূর্তের সতর্কতা প্রয়োজন। আমি কি করতে পারি-শুধু লেকচারবাজি ছাড়া- সে ভাবনা এবং ভাবনা অনুযায়ী কাজের দায়ীত্ব নেওয়াও জরুরী। স্বাধীনতা কেউ উপহার দেয় না।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন