সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

।। আমার ধর্মপুস্তক পাঠের অভিজ্ঞতা ।।

।। আমার ধর্মপুস্তক পাঠের অভিজ্ঞতা ।।
যে বস্তীতে বড় হয়েছি সেখানে আমাদের ঘর থেকে তিন ঘর দূরে পরিমল কাকারা থাকতেন। বিয়েশাদী করেন নি, মাবাবার সঙ্গেই থাকতেন। আমি তখন ক্লাশ সিক্স বা সেভেনে পড়ি। ‘মিউজিক’ পড়ি ‘মূষিক’ উচ্চারণে। ভুল ধরিয়ে দেবার কেউ নেই। বাংলাতে সমস্যা ছিল না। কবিতা পড়তে ভাল লাগতো তাই এক একদিন জোরে আবৃত্তির ঢঙে পড়তাম। এটা যে আমার বিপদ ডেকে আনবে বুঝতে পারি নি।
একদিন শণিবারের বিকেল। খেলতে বেরোচ্ছি, পরিমল কাকার বাবা ডাকলেন ,’দাদুভাই, এদিকে শোন।‘ গেলাম। তারপর।
‘তুই খুব ভাল রিডিং পড়িস শুনেছি।‘( কার কাছে শুনলেন? প্রশ্ন করলাম মনে মনে)
আমি চুপ।
‘এই বইটা আমাকে পড়ে শোনা। ওই টুলটা টেনে নিয়ে বোস।‘ ( ফেঁসে গেলাম কিন্তু পালানোর উপায় জানি না।)
যে বইটা আমার হাতে এল সেটির নাম ‘মনসা মঙ্গল’। অগত্যা সুর করে পড়ে শোনাতে হোত। কিছুক্ষণ পর দাদু ঘুমিয়ে পড়তেন আর আমি সুড়সুড় করে কেটে পড়তাম। কিন্তু মুক্তি পেতাম না। আমার প্রথম রামায়ণ ও মহাভারত পড়া এইভাবে।
#
আমাদের বাড়িতে বাবার একটিমাত্র বই ছিল। এ ছাড়া ‘আলোচনা’ নামে একটি পত্রিকা মাঝে মাঝে আসতো। পত্রিকাটিও ধর্ম সংক্রান্ত। সতসঙ্ঘ প্রকাশনা। বইটির নাম ‘সঙ্ঘ গীতা’। স্বামী প্রণবানন্দজীর লেখা গীতা সারাংশ। ( আশাকরি ঠিক বলছি। ৬০ বছর আগেকার কথা- ১৯৫৭)। একদিন মন অস্থির ছিল। আনমনা ভাবে বইটি হাতে তুলে নিয়ে ভূমিকা পড়ে ফেললাম। লেখা ছিল যে যদি শুদ্ধ মনে শুদ্ধ বসনে কেউ এই বইটি পাঠ করে দিনের কাজ শুরু করে তাহলে সেই দিনের কাজে তার সাফল্য অনিবার্য। তখন আমার প্রবল নেশা গুলি খেলায়। (কলকাতা থেকে এই নেশা আমার সঙ্গে এসেছে এবং ক্লাশ টেন পর্যন্ত সঙ্গ ছাড়ে নি।) ‘গীতার’ ভূমিকা পড়ে মনে জোর পেলাম। তারপর দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে রাস্তার কলে চান করে এসে গেঞ্জী ও প্যান্ট পরে ঠাকুরের সামনে বসলাম। ( গীতা ওখানেই রাখা থাকত )। তারপর মন দিয়ে একটি অধ্যায় পড়ে শেষ করলাম। নিয়মের মধ্যে ছিল একবারে অন্তত একটি অধ্যায় পুরো না পড়লে ফল পাওয়া যাবে না। আমাকে ঠাকুরের সামনে বসে গীতা পাঠ করতে দেখা আমার মায়ের এক দুর্লভ অভিজ্ঞতা। আমার কাছে জানতে চাইলেন,’ হঠাত তোর মনে এতখানি ভক্তি কোথা থেকে এল?’ আমি মৃদু হাসলাম । কোনো উত্তর দিলাম না। তারপর টিফিন খেয়ে গুলি খেলতে চলে গেলাম পাশের গলিতে। সেদিন জিতলাম। গীতায় বিশ্বাস এলো। এইভাবে পরপর দিন দশেক জিতলাম আমি। আমার পুরো বিশ্বাস জন্মালো গীতার দৈবী মহিমা ও শক্তিতে। মাবাবাও খুশি হলেন এই জেনে যে তাদের আজন্ম নাস্তিক ছেলেটির ঠাকুরে ভক্তি হয়েছে। এগারো দিনের দিন থেকে আবার হারতে আরম্ভ করি। তারপর জীবনে হারের পর্ব চলতেই থাকে। গীতার দৈবী শক্তিতে আস্থা নষ্ট হয়ে যায় কিন্তু গীতা পড়ার আগ্রহটা বেঁচে থাকে মনের মধ্যে। এরপর নানা রকম ধর্মের বই পড়েছি। এখনো পড়ি। কিন্তু কিভাবে আগ্রহ জেগেছিল সেটা ভাবলে এখনো মজা লাগে।
সত্যি, আমার পাপের শেষ নেই। নরকেও ফ্ল্যাট পাওয়া না গেলে একটা পিজি খুঁজতে হবে। আমি জানি কিছু বন্ধু ওখানে আছে আমার।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সত্যম বদ প্রিয়ম বদঃ অপ্রিয়ম সত্যম মা বদ

সত্যম বদ প্রিয়ম বদঃ অপ্রিয়ম সত্যম মা বদ ছোটো বয়সে সংস্কৃত ক্লাশে অনুবাদ করেছিলামঃ সত্যম বদ প্রিয়ম বদঃ অপ্রিয়ম সত্যম মা বদ। মনের মধ্যে খটকা এখনো লেগে আছে। সত্য সবসময় 'প্রিয়' হবে এমন কোনো মানে নেই। লোকের মন রাখতে গিয়ে মিথ্যে বা অর্ধ সত্যের চাষ করে যেতে হবে। তারপর আমরা একটা সুস্থ সমাজ চাইব!  মাঝে মাঝেই দেখি আমি হয়তো কোনো বন্ধুর পোষ্টে কিছু মন্তব্য করেছি যা সত্য কিন্তু তার মনঃপূত নয়। কিছুক্ষণ পর দেখি আমার মন্তব্য ডিলিট করে দিয়েছে। আমি হয়তো আর সেখানে কিছু মন্তব্য করব না বা তাকে আনফ্রেন্ড করব না ( তার স্তরে আমি কেন নামবো ?) কিন্ত সত্য কি ডিলিট করা যাবে? একটা তর্ক প্রায় শুনি- আমার সত্য বনা্ম তোমার সত্য। আমার হাসি পায়। সত্যের স্বরূপ তুমি- আমি -স্বাপেক্ষ নয়।

কেমন আছে শহর বর্ধমান ......(সাত)

কেমন আছে শহর বর্ধমান ......(সাত) বাঁকার সাথে পায়ে পায়ে এবার আমরা একটু অন্যপথে ঘুরতে বেরোব শহরটা। আমাদের অভিমানিনী বাঁকার সঙ্গে একটু আন্তরিক চেনাজানা করা দরকার। চলুন শহরের পশ্চিম দিকে একবার ঘুরে আসি। একটা সময় ছিল যখন একমাত্র বাঁকাই এই শহরের পানীয় জলের যোগান দিত। বেলকাশ ও ফেরীঘাটের উত্তর সীমানা দিয়ে বাঁকা বয়ে এসে রথতলা সাইফনের কাছে আরো ডানদিকে বাঁক নিয়ে রথতলাকে দক্ষিণে রেখে শহরে ঢুকেছে। এখানে বাঁকা এখনো ছোটো নদী। রথতলা ঢোকার আগে আর একটু ডানদিকে বাঁকার একটা ধারা বয়ে গেছে। মনে হয় এটা মানুষের কীর্তি । এখানেই জলকল। আরো উত্তরে বীরুটিকরি গ্রাম। এইখানে জল শোধন করে পাম্পের সাহায্যে শহরে পাঠানো হোত পানীয় জল। মূল এলাকার নাম লাকুরডি। এখন এই লাকুরডি ও জলকল-বীরুটিকুরি গ্রামের মাঝ বরাবর দুর্গাপুর হাইওয়ে বা বাইপাস চলে গেছে। আমরা রথতলা ও মোহন্ত স্থলের কাছে বাঁকাকে ছেড়ে লাকুরডির পথ ধরে টিকরহাটে ঢুকবো। লাকুরডি অঞ্চলের পূর্ব সীমানায় একটা আদ্যিকালের পুরোনো গাছ ও তার নীচে একটা মন্দির আছে। ঠিক তার পূর্ব সীমানা দিয়ে একটা ছোটো কাঁদর ঝিরিঝিরি বয়ে চলেছে দক্ষিণে বাঁকার দিকে। গোদার পশিম পারের মাঠের অতিরিক্ত...

কেমন আছে শহর বর্ধমান ?......( আপাতত শেষ পর্ব)

কেমন আছে শহর বর্ধমান ? ......( আপাতত শেষ পর্ব)  কিভাবে লুপ্তোদ্ধার সম্ভব? না, এই এলোমেলোভাবে গড়ে ওঠা শহরের লুপ্তোদ্ধার সম্ভব নয়। প্রথমেই এই কথাটা বলে রাখা ভাল। কিছু মেরামত করা সম্ভব। এখনই যদি সদর্থক উদ্যোগ নেওয়া যায় তাহলে এই শহরের শ্রী ও স্বাস্থ কিছু পরিমাণে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ বিষয়ে নানাজনের সাথে আলোচনা করে আমার কিছু কথা মনে হয়েছে। এখানে সেই কথাগুলি সংক্ষেপে বলতে চাই। অনেকদিন ধরে নানাসূত্র থেকে আমি কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছিলাম। আমার অসাবধানতার কারণে আমার ল্যাপটপটি নিশিকুটুম্ব নিয়ে গেছে। আমার সংগৃহীত যাবতীয় তথ্যও সেইসঙ্গে চলে গেছে। ফলে তথ্যসহ কথা বলা এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। আমি গত দুতিনদিন ধরে বর্ধমান মিউনিসিপ্যালিটী ও বর্ধমান ডেভেলপমেন্ট অথরিটির ওয়েবসাইট খুঁজলাম । দরকারী তথ্য পেলাম না। এই দুই সংস্থা আমাদের এই প্রিয় শহরের উন্নতির জন্য কি কি পরিকল্পনা রচনা করেছেন জানতে পারলে সুবিধা হোত। লক্ষ্য করে দেখবেন আমি আমার প্রতিবেদন ও ব্যাখ্যায় রাজনৈতিক দোষারোপের মধ্যে নিজেকে জড়াই নি। আমি বুঝেছি এই দোষ আমাদের সকলের। ব্যক্তি মানুষের লোভ ও স্বার্থচিন্তা সমানভাবে দায়ী এই শহরের এই বর্তমান অবস্থ...